বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে জয়: এক দুঃসাহসিক অভিযান

3 minute read
0

 


বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে জয়: এক দুঃসাহসিক অভিযান


চট্টগ্রামের পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী সম্প্রতি একটি দুঃসাহসিক অভিযানে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি একই অভিযানে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার) এবং চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট লোৎসে (৮,৫১৬ মিটার) জয় করেছেন। এই কীর্তি অর্জনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।​


প্রাথমিক প্রস্তুতি ও যাত্রা:

২০২৫ সালের ১ এপ্রিল বাবর আলী নেপালের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে লুকলা বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং ১০ এপ্রিল বেস ক্যাম্পে পৌঁছান। উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তিনি একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করেন। ২৬ এপ্রিল বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত গিয়ে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এরপর অনুকূল আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন।​


এভারেস্ট ও লোৎসে জয়:

১৪ মে মাঝরাতে চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন বাবর। ১৫ মে সকালে ক্যাম্প-২, ১৭ মে ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে ক্যাম্প-৪-এ পৌঁছান। ১৮ মে মাঝরাতে চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১৯ মে ভোরে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছান এবং বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। এরপর ২১ মে সকালে মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় পা রাখেন। এই অভিযানে তার সঙ্গে ছিলেন নেপালের গাইড বাইরে তামাং।​


চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা:

এভারেস্ট থেকে নামার সময় বাবর আলী একটি তুষারঝড়ে পড়েন এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা সেখানে আটকে থাকেন। তিনি জানান, "তুষার ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে ফিরেছি" । এই অভিযানে তিনি যতটা সম্ভব কম কৃত্রিম অক্সিজেন ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, ভবিষ্যতে অক্সিজেন সহায়তা ছাড়াই আট হাজার মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ আরোহণের স্বপ্ন দেখেন।​


দেশে ফেরা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

২৮ মে রাতে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে তার ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সসহ অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দ্বারা সংবর্ধিত হন। তিনি বলেন, "দেশে ফিরে আমার খুব ভালো লাগছে। এভারেস্ট জয় করা মানেই হচ্ছে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করা। বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করছি" । ভবিষ্যতে তিনি আরও আট হাজার মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ জয় করার পরিকল্পনা করছেন এবং এজন্য পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।​


ডা. বাবর আলীর এই সাফল্য বাংলাদেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। তার এই দুঃসাহসিক অভিযান নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং দেশের পর্বতারোহণ খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।​

বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে জয়: এক দুঃসাহসিক অভিযান


বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযান

1. ডা. বাবর আলী কে?

উত্তর: ডা. বাবর আলী একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ পর্বতারোহী, যিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তিনি একসঙ্গে মাউন্ট এভারেস্ট এবং লোৎসে জয় করে দেশের গর্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।


2. তিনি কবে অভিযান শুরু করেন?

উত্তর: তিনি ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ত্যাগ করে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং ৪ এপ্রিল লুকলায় পৌঁছান।


3. তিনি কোন দুটি পর্বত জয় করেছেন?

উত্তর: বাবর আলী বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার) এবং চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসে (৮,৫১৬ মিটার) জয় করেন।


4. কখন তিনি চূড়ায় পৌঁছান?

উত্তর:   এভারেস্টের চূড়ায়: ১৯ মে, ২০২৫ ভোরবেলা

লোৎসের চূড়ায়: ২১ মে, ২০২৫ সকাল


5. অভিযানে তার সঙ্গে কে ছিলেন?

উত্তর: তার সঙ্গে ছিলেন একজন নেপালি শেরপা গাইড, বাইরে তামাং।


6. তিনি কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

উত্তর: তিনি একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করে শরীরকে অভিযোজন করান (acclimatization)। বেস ক্যাম্প থেকে শুরু করে ক্যাম্প-৪ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যান এবং আবহাওয়ার অপেক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে চূড়ার দিকে অগ্রসর হন।


7. কোনো ঝুঁকির মুখে পড়েছিলেন কি?

উত্তর: হ্যাঁ, এভারেস্ট থেকে নামার সময় তিনি তুষারঝড়ে পড়েন এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকেন। এটি তার জীবনের অন্যতম কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল।


8. তিনি কি অক্সিজেন ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তর: তিনি যতটা সম্ভব কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়া অভিযানে থাকার চেষ্টা করেন। ভবিষ্যতে তিনি “নো অক্সিজেন” অভিযানেও অংশ নিতে চান।


9. দেশে ফিরে তিনি কী বলেছিলেন?

উত্তর: দেশে ফিরে তিনি বলেন, “এমন কঠিন পরীক্ষা আগে আমাকে দিতে হয়নি। এভারেস্ট জয় করা মানে দেশের পতাকা তুলে ধরা। আমি গর্বিত যে বাংলাদেশের নাম বিশ্বে পৌঁছাতে পেরেছি।”


10. ভবিষ্যতে তার পরিকল্পনা কী?

উত্তর: তিনি আরও আট হাজার মিটারের চূড়া জয় করার লক্ষ্য নিয়েছেন এবং এর জন্য পৃষ্ঠপোষকতা খুঁজছেন। তিনি চান বাংলাদেশি তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী পর্বতারোহণ কমিউনিটি গড়ে তুলতে।


11. সাধারণ মানুষ কীভাবে অনুপ্রাণিত হতে পারে?

উত্তর: তার গল্প প্রমাণ করে, আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, এবং ধৈর্য থাকলে অসম্ভবও জয় করা সম্ভব। যেকোনো ক্ষেত্রেই এই মনোভাব অনুপ্রেরণাদায়ক।



To Top